শামসুদ্দিন জাহান
আমরা
ছোটবেলায় কত রাক্ষস, দৈত্য, দানব-পরী, ভূত-পেত্নীর গল্প শুনেছি, তাই না ?
চীনদেশে বাচ্চারা কিন্তু এ জাতীয় গল্পের পাশাপাশি আরেকটা জিনিসের গল্প
শুনতে শুনতে বড় হতো। গল্পটা এরকম।
এক দেশে ছিলো এক রাজা। সে খুব শক্তিশালী রাজা ছিলো। বিশাল ছিল তার সেনাবাহিনী। হাজার হাজার তার হাতি, লাখ লাখ ঘোড়া। আর সৈনিকেরা কেমন ছিলো? একেকজনের কাঁধ ছিলো এই এত্তো চওড়া আর সে কী শক্তি তাদের! রাজা তার আশেপাশের সব রাজ্যের রাজাদের যুদ্ধে পরাজিত করে বিশাল চীন দেশ তৈরি করেন।
সব রাজা নিজের হয়ে যাওয়ায় যুদ্ধ নেই। দেশেও অনেক শক্তি। প্রজারা সব সুখেই আছে। তখন রাজা কী করবেন? কাজতো খুব বেশি নেই। তিনি মাটির এক সেনাবাহিনী বানানো শুরু করলেন। হাজারে হাজারে সৈন্য সামন্ত, হাতি, ঘোড়া, রথ আর সত্যিকারের সব অস্ত্রশস্ত্র।
এক দেশে ছিলো এক রাজা। সে খুব শক্তিশালী রাজা ছিলো। বিশাল ছিল তার সেনাবাহিনী। হাজার হাজার তার হাতি, লাখ লাখ ঘোড়া। আর সৈনিকেরা কেমন ছিলো? একেকজনের কাঁধ ছিলো এই এত্তো চওড়া আর সে কী শক্তি তাদের! রাজা তার আশেপাশের সব রাজ্যের রাজাদের যুদ্ধে পরাজিত করে বিশাল চীন দেশ তৈরি করেন।
সব রাজা নিজের হয়ে যাওয়ায় যুদ্ধ নেই। দেশেও অনেক শক্তি। প্রজারা সব সুখেই আছে। তখন রাজা কী করবেন? কাজতো খুব বেশি নেই। তিনি মাটির এক সেনাবাহিনী বানানো শুরু করলেন। হাজারে হাজারে সৈন্য সামন্ত, হাতি, ঘোড়া, রথ আর সত্যিকারের সব অস্ত্রশস্ত্র।
রাজা তার মৃত্যুর আগে নিজের মৃতদেহ রাখার জন্যে একটা সমাধি মন্দির
বানালেন। সমাধি মন্দিরের চারপাশে মাটির তৈরি সৈন্যবাহিনী এক সারিতে দাঁড়
করিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিলেন। মৃত্যুর পর রাজাকে ঐ মন্দিরে কবর দেয়া হয়।
সাথে রাজ্যের সব সম্পদ ও দেয়া হয়। যাতে মৃত্যুর পরের পৃথিবীতে রাজার
অর্থের কোন সমস্যা না হয়। ঐ সময় অন্য কোন রাজাও ঝামেলা করতে পারবে না।
কারণ তার মাটির সেনাবাহিনী আছে। এই সমাধি মন্দিরের নীচ থেকে জাদুর এক নদী
বয়ে গেছে সমুদ্রের দিকে।
গল্পটা অদ্ভুত, তাই না? এটা কিন্তু কোন গল্প না। ১৯৭৮ সালে প্রমাণিত হয় যে, রাজার যে রূপকথা শোনানে হতো আদপে কোন রূপকথা না, একদম সত্যি ঘটনা। ১৯৭৮ সালে চীনে যেখানে সম্রাট কিন এর সমাধি বলে ধারণা করা হয়, তার কাছেই মাটির প্রায় পনেরো বিশ ফুট নীচে লাল মাটির তৈরি প্রায় আট হাজার সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী পাওয়া যায়। চীনের প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার এই পোড়ামাটির সেনাবাহিনী।
গল্পটা অদ্ভুত, তাই না? এটা কিন্তু কোন গল্প না। ১৯৭৮ সালে প্রমাণিত হয় যে, রাজার যে রূপকথা শোনানে হতো আদপে কোন রূপকথা না, একদম সত্যি ঘটনা। ১৯৭৮ সালে চীনে যেখানে সম্রাট কিন এর সমাধি বলে ধারণা করা হয়, তার কাছেই মাটির প্রায় পনেরো বিশ ফুট নীচে লাল মাটির তৈরি প্রায় আট হাজার সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী পাওয়া যায়। চীনের প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসের সবচে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার এই পোড়ামাটির সেনাবাহিনী।
একদিন কৃষকেরা তাদের চাষের জন্যে জমি খুড়ছিলো। হঠাৎ করেই পোড়ামাটির একটা
মানুষের মাথা কোদালের কোপে বেরিয়ে এলো। এই ঘটনা চারদিকে বাতাসের আগে ছড়িয়ে
পড়লো। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা একেবারে উড়ে চলে গেলেন ঘটনাস্থলে।
এ ঘটনা ঘটে চীনের একেবারে মূল কেন্দ্র শিআন প্রদেশে। এরপর দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের চার প্রত্নতত্ত্ববিদ এক হাজার ভাঙা সৈনিক মূর্তির পাশাপাশি সাত হাজার অক্ষত সৈনিক মূর্তি পেলেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, যে এক হাজার ভাঙা সৈনিক মূর্তি পাওয়া গেছে, তা হচ্ছে সম্রাট কিনের মৃত্যুর পর দস্যুদলের কীর্তি। এর মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও কিছু মূর্তি ধ্বংস হয়েছে। তবে বাকী যে সাত হাজার মূর্তি পাওয়া গেছে তা একেবারে অক্ষত।
এ সব মূর্তির পাশাপাশি প্রায় একশ কাঠের যুদ্ধরথ বাস্তবের ঘোড়ার আকারের ছয়শো মাটির ঘোড়া আর কয়েক হাজার যুদ্ধাস্ত্র পাওয়া গেছে। যুদ্ধাস্ত্রগুলো একটাও কিন্তু মাটির না, আসল অস্ত্র সৈনিকদের প্রায় প্রতিটি মূর্তি ছয় ফুট লম্বা এবং প্রত্যেকের মুখের আদল আলাদা আলাদা একটা আরেকটার সাথে, মেলে না।
এ ঘটনা ঘটে চীনের একেবারে মূল কেন্দ্র শিআন প্রদেশে। এরপর দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের চার প্রত্নতত্ত্ববিদ এক হাজার ভাঙা সৈনিক মূর্তির পাশাপাশি সাত হাজার অক্ষত সৈনিক মূর্তি পেলেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, যে এক হাজার ভাঙা সৈনিক মূর্তি পাওয়া গেছে, তা হচ্ছে সম্রাট কিনের মৃত্যুর পর দস্যুদলের কীর্তি। এর মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও কিছু মূর্তি ধ্বংস হয়েছে। তবে বাকী যে সাত হাজার মূর্তি পাওয়া গেছে তা একেবারে অক্ষত।
এ সব মূর্তির পাশাপাশি প্রায় একশ কাঠের যুদ্ধরথ বাস্তবের ঘোড়ার আকারের ছয়শো মাটির ঘোড়া আর কয়েক হাজার যুদ্ধাস্ত্র পাওয়া গেছে। যুদ্ধাস্ত্রগুলো একটাও কিন্তু মাটির না, আসল অস্ত্র সৈনিকদের প্রায় প্রতিটি মূর্তি ছয় ফুট লম্বা এবং প্রত্যেকের মুখের আদল আলাদা আলাদা একটা আরেকটার সাথে, মেলে না।
আলাবামার বামিংহাম মিউজিয়ামের এশিয়ান আট বিভাগের কিউরেটর ডক্টর ডোনাল্ড উড এই সেনাবাহিনী সম্পর্কে বলেছেন, “প্রত্যেকটা সৈনিকের চেহারা আলাদা, একেবারে প্রত্যেকটা। এদের কারও মুখে হালকা হাসির রেখা আছে, কারও চোখ মুখ শক্ত। কারও বয়স খুব কম, আবার কেউ মধ্যবয়স্ক। অনেকের গোঁফ আছে আবার অনেকের শুধু দাড়ি। এদের চুল আঁচড়ানোর মধ্যেও পার্থক্য আছে।”
ড. উডের ধারণা, যে সব কুমাররা সৈনিকদের চেহারার অংশ তৈরি করেছে তারা কাজের সময় সামনে সত্যিকারের সৈনিকদের বসিয়ে রেখেছিলো।
মজার বিষয় হচ্ছে, সৈনিকদের পাশাপাশি যে সব ঘোড়া রাখা হয়েছিলো সেগুলোর পর্যন্ত মুখ ভাঙা আলাদা আলাদা অস্ত্রশস্ত্র সব সত্যিকারের অস্ত্র। আর সেসব এমন এক সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি যে দীর্ঘ দুই হাজার বছর মাটির নীচে থাকার পরও তাতে মরিচা পড়েনি।
এতো বড় একটা মাটির সেনাবাহিনী বানানোর কী উদ্দেশ্য ছিলো ? এর উত্তর দেবার
চেষ্টা করেছেন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মেয়ার। তিনি
বলেছেন, “মৃত্যুর পরের জগৎ নিয়ে চীনের লোকজন সবসময়ই খুব সচেতন ছিলো। তাদের
সংস্কারগত বিশ্বাস হচ্ছে, মৃত্যুর পরেও একটা আলাদা জীবন আছে। সম্রাট কিন
মুত্যুর পরের সেই জগতে নিজের নিরাপত্তার কথাটি মাথায় রেখেই টেরাকোটার
বিশাল এই সেনাবাহিনী তৈরি করেছিলেন।”
তার বোধহয় ধারণা ছিলো, মূর্তি যত নিখুঁত হবে তার কর্মদক্ষতাও ততো বাড়বে। একারণেই বোধহয় পুরোটা সেনাবাহিনী এতো চমৎকার নিখুঁত। আরেকটা বিষয়ও আছে। সম্রাট কিনের কত ক্ষমতা ছিলো তা এই সেনাবাহিনীর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আট হাজার মাটির মূর্তি বানানো খুব একটা সহজ কাজ না। এতে প্রচুর লোক লাগার কথা। বুঝে দেখ, সম্রাট কিনের কী প্রচন্ড ক্ষমতা ছিলো সে সময়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই বিশাল সৈন্যবাহিনী তৈরি করতে সম্রাট কিন যদি সাত লক্ষ লোকও ব্যবহার করে থাকেন তবে তাদের কাজ শেষ করতে ত্রিশ বছর লাগার কথা। ডক্টর মেয়ার বলেছেন, “একটা লোকের কথায় সাত লাখ মানুষ টানা ত্রিশ বছর কাজ করেছে। এই কাজের ব্যাপ্তিটা আমি আসলে কল্পনা করতে পারছি না। এ কাজের জন্যে ঘটনাস্থলের আশেপাশে বিরাট জনপদ পড়ে ওঠার কথা।”
তার বোধহয় ধারণা ছিলো, মূর্তি যত নিখুঁত হবে তার কর্মদক্ষতাও ততো বাড়বে। একারণেই বোধহয় পুরোটা সেনাবাহিনী এতো চমৎকার নিখুঁত। আরেকটা বিষয়ও আছে। সম্রাট কিনের কত ক্ষমতা ছিলো তা এই সেনাবাহিনীর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আট হাজার মাটির মূর্তি বানানো খুব একটা সহজ কাজ না। এতে প্রচুর লোক লাগার কথা। বুঝে দেখ, সম্রাট কিনের কী প্রচন্ড ক্ষমতা ছিলো সে সময়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই বিশাল সৈন্যবাহিনী তৈরি করতে সম্রাট কিন যদি সাত লক্ষ লোকও ব্যবহার করে থাকেন তবে তাদের কাজ শেষ করতে ত্রিশ বছর লাগার কথা। ডক্টর মেয়ার বলেছেন, “একটা লোকের কথায় সাত লাখ মানুষ টানা ত্রিশ বছর কাজ করেছে। এই কাজের ব্যাপ্তিটা আমি আসলে কল্পনা করতে পারছি না। এ কাজের জন্যে ঘটনাস্থলের আশেপাশে বিরাট জনপদ পড়ে ওঠার কথা।”
সম্রাট কিন জন্মগ্রহণ করেছেন খ্রিষ্টপূর্ব ২৫৯ সালে। তিনি মাত্র তের বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন এবং মাটির সৈন্যবাহিনী তৈরি করা শুরু করেন। তার শাসনামলে তিনি শত শত বছর বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যকার যুদ্ধবিগ্রহ শেষ করে স্থাপন করেন একক চীন রাজ্য। তার শাসনামলেই গোটা চীনে একক মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন হয় এবং একই পরিমাপ পদ্ধতি ও একই লৈখিক ভাষা চালু হয়। আরও একটি বৈপ্লবিক বিষয় তার মস্তিক প্রসূত। তিনি গোটা চীনের সকল গরুর গাড়ি এবং রথের অক্ষদন্ড বা অ্যাক্সেল একই মাপের করেন। যাতে তাতে সব চাকা ঠিক মতো লাগানো যায়।
সম্রাট কিনের শাসনামলে এসব ভালো কাজের পাশাপাশি কিছু বাজে বিষয়ও ঘটেছে। তিনি তার প্রজাদের বিশাল বিশাল প্রজেক্টে জোর করে অংশ গ্রহণ করিয়েছেন। তার শাসনামলে চীনে ২৭০টি চমৎকার রাজ প্রসাদ গড়ে ওঠে, তৈরি হওয়া শুরু হয় চীনের বিখ্যাত সেই দেয়াল এবং মাটির বিরাট সৈন্যবাহিনী। এছাড়াও রাজপথ এবং অন্যান্য ভবন তো আছেই। ইতিহাসবিদদের ধারণা, সম্রাট কিন তার প্রজাদের মধ্যে প্রতি দশ জনের একজনকে তার কাজের জন্যে ব্যবহার করেছিলেন।
কিন্তু এতোকিছুর পরও মহান সম্রাট কিন তার, শাসনামলে যা করে গেছেন তার জন্যে চীন আজও গর্ববোধ করে।